প্রধানমন্ত্রী মোদি খুব গর্ব সহকারে বলেছিলেন যে তিনি এমন ব্যবস্থা করবেন যাতে করে যারা ‘হাওয়াই চপ্পল’ পরেন তারাও ‘হাওয়াই জাহাজ’-এ ভ্রমণ করতে পারেন।
কিন্তু আজকের দিনে বিমান পরিবহনে ১৫০০০ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে, মোদিজীর কথাগুলি কেমন যেন নিষ্ঠুর পরিহাসের মতো শোনাচ্ছে না!!
এই আকাশছোঁয়া বিমান ভাড়া মধ্যবিত্তদের মধ্যে, বিশেষ করে যারা এক প্রকার নিরুপায় হয়েই বিমানে যাত্রা করেন তাদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। এয়ারলাইন্সগুলিকে সরকারের তরফে এমন ছাড় দেওয়া হয়েছে এবং এমন ব্যাপক বেসরকারীকরণের জন্যই আজকের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি।
অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক ও ভারত সরকারকে কে কিছু কঠিন তথ্যের মুখোমুখি হতেই হবে:
১) অর্থনীতির যখন মন্দা চলে, তখন বিমান ভাড়ার ক্যাপ তুলে নেওয়া রীতিমতা অপরাধমূলক, ঠিক যেমনটি সরকার গত বছর ২২শে আগস্ট করেছিল।
২) গো-ফার্স্টের পতনের সাথে সাথে এবং স্পাইসজেট সংস্হা তিলমাত্র রুটে ফ্লাইট দেওয়ার কারণে ফ্লাইটের সংখ্যায় এই বিশাল হ্রাসকে সংশোধন করার জন্য সরকারের কাছে কোন উপযুক্ত কৌশল আজও নেই কেন ?
৩) যখন উচ্চ চাহিদা থাকে তখন পর্যাপ্ত বিমান সরবরাহের অমিলের জন্য মূল্য নির্ধারণের যে অ্যালগরিদম করা হয়েছে তার কারণে টিকিটের দাম অসম্ভব বাড়াতে থাকবেই। ভারত সরকার কি এই অস্বাভাবিক বিমান ভাড়া রোধ করার জন্য কোন সুনির্দিষ্ট হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করেছে?
৪) বেসরকারী বিমানবন্দর অপারেটরদের দ্বারা অর্জিত যে মুনাফা, বিশেষ করে আদানির বিমানবন্দরগুলিতে তার যে মেগা বিনিয়োগ, তা প্রকৃতপক্ষে ব্যাঙ্ক লোনের মাধ্যমে যা আবার ঘুরপথে একপ্রকার সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই বেরিয়ে আসছে!!
৫) কেন অসামরিক বিমান মন্ত্রক জনগণের দুর্ভোগের প্রতি এতটা উদাসীন যে বালাসোর ট্রেন ট্র্যাজেডি হওয়ার সময় ভুবনেশ্বর এবং কলকাতা থেকে বিমানের টিকিটের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়?
৬) ATF জ্বালানীর উপর এয়ারলাইনস সংস্হা গুলিকে যে ট্যাক্স দিতে হয় সেটি তাদের ঘাড়ের চারপাশে একটি ফাঁসের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে, সরকারের কি নিশ্চিত করা উচিত নয় এই সুউচ্চ খরচ যেন গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া না হয় ?
শুধু পরিসংখ্যানকে বিকৃত করে এবং প্রকৃত সত্য ও তথ্যকে ভূ-গর্ভে পুঁতে দিলেই কিনতু কঠিন তথ্যাবলী ও মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন দুর্ভোগ দূর করা যায় না।
বেকারত্ব আজ ২৩% (যা একটি বৈশ্বিক রেকর্ড), আরও ২৩ কোটিরও বেশী মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে, এবং আপনারই পরিসংখ্যান অনুযায়ী আজ ৮০ কোটি ভারতীয় খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকারের উপর নির্ভর করছে। অর্থাৎ বলে দেওয়াই যায় যে এই অর্থনৈতিক বৃদ্ধির যে সাংখ্যমান আপনার অর্থমন্ত্রী পেশ করে থাকেন তা’ শুধুমাত্র ধনীদের জন্য আর সাধারণ মধ্যবিত্ত এই অস্বাভাবিক বেকারত্ব এবং অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির জোড়া আক্রমণে ভুগছে, তার উপর অসামরিক বিমান চলাচল খাতেও মূল্য নিয়ন্ত্রণে আপনার বেলাগাম পদ্ধতির কারণে মধ্যবিত্তের আরও ভোগান্তি।
কান্নুর বিমানবন্দরের বর্তমান সময়সূচীর উদাহরণই নিয়ে নিন, যেখান থেকে ২৫২ টি মাসিক GoFirst ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে উড়ত। GoFirst ডুবে যাওয়ার পরে এটির বিকল্প কোন ফ্লাইট প্রতিস্থাপিত করা হয়নি। পুনে বিমানবন্দরও তথৈবচ, GoFirst – এর সংকট এবং SpiceJet – এর দুর্বল কর্মক্ষমতার কারণে ৩০% স্লট খালি রয়েছে। যদি সত্যিই ভারতীয় অর্থনীতি বৃদ্ধি পায়, তাহলে এয়ারলাইন্সগুলি তাদের সক্ষমতা অবশ্যই বাড়াতো। পরিবর্তে, তারা যাতে ভাসমান থাকতে পারে তার জন্য সরকার থেকেই আকাশচুম্বী হারে চার্জ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। অতএব, হাওয়াই চপ্পলের হাওয়াই জাহাজে চড়ার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট।
অথচ, আপনারা অবগত আছেন কিনা জানি না, ২০২৩ সালের মার্চ মাসেই, এয়ারলাইনগুলি ‘AERA’ – কে চিঠি দিয়ে দাবি করেছিল যে আদানি-মালিকানাধীন বিমানবন্দরগুলি অতিরিক্ত শুল্ক প্রস্তাব চার্জ করছে, বিশেষ করে লখনউ, আহমেদাবাদ এবং ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে উচ্চ অবতরণ এবং পার্কিং চার্জ নেওয়া হচ্ছে যা তারা আদৌ নিতে পারে না। বিশদে জানতে নীচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে পড়ুন : (thehindubusinessline.com/news/airlines-…)
ট্রেন ট্র্যাজেডির ৪৮ ঘন্টা অতিক্রম হওয়ার পরেও, ভুবনেশ্বরে যাতায়াতের ফ্লাইটগুলি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ছিল, উপরন্তু ভুবনেশ্বর-চেন্নাই যাতায়াতে এমনকি ৪২০০০-৬০০০০ টাকা খরচ করেও প্রয়োজনের সময় টিকিট পাওয়া যায় নি। সরকারের নখদাঁতবিহীন উপদেষ্টা মন্ডলীর অদ্ভুত কাজকারবারের আরেকটি নিদর্শন।
ভাবতে অবাক লাগে যে কেন্দ্র দ্বারা আরোপিত আবগারি করের বোঝা সম্পর্কে রাজ্যগুলির প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরিবর্তে, মোদি বাবু আপনি এমন কিছু ব্যাপারে রাজ্যগুলিকে সবসময় দোষারোপ করে থাকেন যা বস্তুতপক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারী স্তরেই সংশোধনযোগ্য।
তবে, আর যাই হোক আপনারা নিশ্চয়ই এটুকু অবগত আছেন যে দিল্লি – ব্যাঙ্গালোর এর মতো গুরুত্বপূর্ণ রুটেও ফ্লাইটগুলি সাধারণ মানুষের নাগালের কত বাইরে। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রীর কাছে জানতে চাই আপনি কি এখনও এই বর্ধিত হারে ভাড়া নেওয়ার জন্য বিমান পরিষেবা প্রদানকারী সংস্হাগুলিকে রক্ষাকবচ দিয়ে যাবেন নাকি সাধারণ মধ্যবিত্তের স্বার্থ দেখবেন?
আজ দিনের আলোর মত পরিস্কার যে এই সরকার মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে অপারগ, এয়ারলাইন্সগুলির এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে অক্ষম এবং পুঁজিপতি বিমানবন্দর অপারেটরদের হাতে লুটপাটের অঢেল সুবিধা দিয়ে দিয়েছে৷
এটাই আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদিজীর অধীনে অসামরিক বিমান পরিবহন সেক্টরের আসল চিত্র।
অতএব, হাওয়াই চপ্পলের হাওয়াই জাহাজ চড়ার স্বপ্ন দেখানো আমাদের বাক্যবাগীশ প্রধানমন্ত্রীর আরো একটি জুমলা!!